Friday, April 25, 2014

‘বনলতা সেন’কে ঘিরে অনেক অমীমাংসিত রহস্য !!!

‘বনলতা সেন’কে ঘিরে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন!!! কবি জীবনানন্দ দাশ ও তার ‘বনলতা সেন’ কবিতা বাংলা সাহিত্যে একটি বহুল আলোচিত বিষয় । তার কাব্যে কারণে-অকারণে তরু-গুল্ম-লতা-পাতা ঝোপঝাড়ের এত বর্ণনা পাওয়া যায় যে তাকে কবি না বলে একজন অকৃত্রিম বনসংরক্ষক বা ফরেষ্ট গার্ড বলে ভ্রম হতে পারে। বাংলাভাষার কোন কবির সম্ভবত এত গাছপালার নাম-ধাম জানা নে
ই।

তারই রচিত ‘বনলতা সেন’ বাংলা সাহিত্যে একটি বহুল আলোচিত কবিতা। বহুল আলোচিত বলেই এর ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। দীর্ঘদিন থেকে কবিতাটি একইভাবে পাঠ করা হচ্ছে। বেশীরভাগ পাঠক কবিতাটি সম্পর্কে পূর্ব-ধারণা নিয়ে কবিতাটি পাঠ করছেন। যার ফলে কবিতাটি তার বহুমাত্র্র্রিক ব্যাখা-বিশ্লেষণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’বনলতা সেন’কে ঘিরে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন নীচে তুলে ধরলামঃ-
বনলতা সেন কি নারী না পুরুষ কবিতটিতে তা স্পষ্ট নয়।”অন্ধকার বিদিশার নিশার মত চুল” এবং “শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মত মুখ” এবং “পাখীর নীড়ের মত চোখ” নারী/পুরুষ যে কারো থাকতে পারে। বরং দীঘল কেশ,কাজল-টানা চোখ এর কথা উল্লেখ থাকলে বনলতা সেন যে আসলেই একজন নারী তা নিশ্চিত হওয়া যেত।
পুরো কবিতায় বনলতা সেন কর্তৃক কোন রমণীয় পোষাক যেমন, শাড়ীর আচল, স্তন-আবরণী উড়না/উত্তরীয় এসবের বর্ণনা নাই। এছাড়া কোনরকম প্রসাধনী/অলংকার ব্যবহারের বর্ণনা নাই। বাঙালী নারী প্রসাধন-প্রিয়,বিশেষ করে সুন্দরী নারীরা এ ব্যাপারে আরো সচেতন। বনলতা সেন পুরুষ বলেই কি এসব কবির নজরে আসেনি ?
পাখীর নীড় বলতে আমরা দেখি, কুড়িয়ে আনা খড়কুটোর নিশ্চল নিষ্প্রাণ বিবর্ণ স্তূপ।কাজেই পাখীর নীড়ের মত চোখ বলতে চোখে-ছানিপড়া ভাবলেশহীন বৃদ্ধার চোখের কথাই মনে আসে।
 “অন্ধকার বিদিশার নিশার মত চুল” এবং “শ্রাবস্তীর কারুকার্যের মত মুখ” সার্বজনীন উপমা কিনা? [সোনালী চুল ইংরেজদের প্রিয় এবং সরল মুখশ্রী অনেকের পছন্দ]
 “অন্ধকার বিদিশার নিশা” দ্বারা নিষ্প্রদীপ বিদিশা নগরীকে বুঝায় না। কাজেই ঘন-কালো চুলের উপমা হিসেবে এটা সঠিক নয়।
 অন্ধকারে বনলতার সাথে সাক্ষাৎ করে বনলতার সৌন্দর্য সম্পূর্ণ অবলোকন করা সম্ভব কিনা?
 বনলতা সেনের প্রতি কবির প্রেম কি একতরফা?
বনলতা কি শুধুই সৌন্দর্যময়ী না প্রেমময়ী? বনলতা সেন চরিত্রে প্রেম ও সৌন্দর্যের অসম সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়।
 জীবনানন্দের প্রতি বনলতা সেনের প্রকৃতই প্রেম নাকি একজন চরম হতাশাগ্রস্থ পুরুষের প্রতি সহানুভূতি?
 শুধু চুল,মুখ ও চোখের বর্ণনা নারী দেহের সৌন্দর্য বর্ণনার জন্য যথেষ্ট কিনা ? নারী দেহের আকর্ষণীয় প্রত্যঙ্গ যেমন, বিল্ব স্তন, পদ্মযোনী, গুরু নিতম্ব এসব বর্ণনার অনুপস্থিতি কি তার নারী-সৌন্দর্যের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় না?
 কবি বনলতা সেনকে কেন অন্ধকারে আকাঙ্খা করেন? [ ডঃ আকবর আলী, প্রাক্তন উপদেষ্টা,তত্ত্বাবধায়ক সরকার টিভি চ্যানেলে একই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন]
 বনলতা কি বিবাহিতা না কুমারী? কবির সাথে এই সম্পর্ক কি পরকীয়া?
 কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছিলেন বনলতা সেন, এই শান্তি কি শুধুই মানসিক নাকি মনোদৈহিক?
 নাটোরের বনলতা সেন কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছিলেন,তবে কবি আর কোথায় শান্তি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন?
 হাজার বছরের ক্লান্ত কবি মাত্র দুদন্ড শান্তি পাওয়ার কথা অতৃপ্তির সাথে অভিমান-ভরে জানিয়েছেন। কবির এই অপূর্ণ প্রাপ্তির বেদনা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। কবিতাটিতে প্রাপ্তির চেয়ে প্রত্যাশাই প্রধান্য পেয়েছে।
 নাটোরের বনলতা সেন এর সাথে কবির কি নাটোরেই দেখা হয়েছিল নাকি অন্য কোথাও…
 কবি যে সময়ের নাটোরের বনলতা সেন এর কথা বলেছেন সে সময়ে নাটোরে সেন বংশীয়া সম্ভ্রান্ত সুন্দরী রমণী বসবাস করতেন বলে জানা যায় না।
 “বনলতা সেন” কবিতা জুড়ে একজন পর্যটকের বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে নাকি একজন প্রেমিকের উচ্ছাস প্রাধান্য পেয়েছে?
 কবি কি শুধুই ভ্রমণ-ক্লান্ত ছিলেন নাকি দেহে-মনে অতৃপ্ত ছিলেন?
 বনলতার সাথে কবির এই মিলন দুটি অসমবয়সী নর-নারীর মিলন কিনা,কারণ দীর্ঘ পথচলার শেষে কবি বনলতা সেনের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। আর সেজন্যই কি অসমবয়সী কবিকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েই বনলতা সেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন?
 কবি কি শেষ পর্যন্ত একজন প্রত্যাখাত পুরুষ ? জীবনানন্দ ছিলেন দাশ বংশীয় আর বনলতা ছিলেন সেন বংশীয়া- এ জন্যই কি বননলতা অসবর্ণ সম্পর্কে সম্মত হননি।
 কবিকে বনলতা সেনের তির্যক প্র্রশ্ন– এতদিন কোথায় ছিলেন’? বনলতা সেন কি কবিকে সন্দেহ করতেন? মনে হয় অন্ধকারে সাক্ষাৎ করতে আসায় বনলতা সেন কবির উপর খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন।
 বনলতা সেন কবিকে খুব বেশী ভালবাসতেন বলে মনে হয় না। কারণ কবি এতদিন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে ও কেমন ছিলেন জানতে চাওয়া হয়নি। কাজেই দীর্ঘ অদর্শনের পর নায়ক-নায়িকার আবেগময় সাক্ষাৎ এখানে অনুপস্থিত।
 বনলতা সেন কি কবিকে অনাগ্রহের সাথে বরণ করেছিলেন ,না হয় মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনার বর্ণনা কবিতাটিতে অনুপস্থিত কেন?
 অন্ধকারে কবির উপস্থিতি টের পেয়ে ও বনলতা কেন প্রদীপ জ্বালেননি ? অন্ধকারের সাক্ষাৎ পর্বটি প্রচলিত নৈতিকতা-বিরোধী কিনা?
 “ডানায় রোদের গন্ধ মুছে ফেলে চিল”–’রোদের রঙ’ এর জায়গায় ‘রোদের গন্ধ’ লেখার মত ভুল তথ্য কি একজন কবির কাছ থেকে আদৌ প্রত্যাশিত ? কবি কি বর্ণান্ধ ছিলেন?
 তাছাড়া কবির চিন্তাধারায় যথেষ্ট অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। হাজার বছর পথ হাটার কথা বলে পরক্ষণেই জলপথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরের বর্ণনা দিয়েছেন। মনে হয় কবি চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
 মালয় সাগরের আদৌ কোন ভৌগলিক অস্তিত্ব আছে কিনা? এখানে কবির ভৌগলিক জ্ঞানের দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়।
 কবির ভৌগলিক বর্ণনা প্রাচীন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সীমিত — তাহলে এই বর্ণনা কিভাবে সকল দেশ কালের পুরুষের প্রতিনিধিত্ব করে? এটি এশিয়াবাসী হতাশাগ্রস্থ পুরুষের নারীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
 বনলতা সেন কবিতায় সাগর,সবুজ ঘাসের দ্বীপ,হালভাঙা নাবিক,নদীর উল্লেখ থেকে সমুদ্রগামী জাহাজে দীর্ঘদিন নারীসঙ্গবর্জিত নাবিকদের কথা মনে আসে। এটি স্থলভাগের পুরুষের স্বগতোক্তি কখনো নয়। সার্বজনীন পুরুষ এখানে অনুপস্থিত।
 কবি মাত্র্র হাজার বছর পৃথিবীর পথে হেটেছেন– এ দ্বারা কবি হাজার বছরের পুরুষের কথাই বলেছেন,বক্তব্যটি সর্বকালের পুরুষকে ধারণ করেনি।
 কবিতাটিতে আদিম যুগের শিকারী ও শিকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। পুরুষ শিকারী তার নারী শিকারকে খুজে বেড়ায়। এখানে ও নারী পুরুষের অসম আচরণ পরিলক্ষিত হয়। অর্থ্যাৎ পুরুষ সকর্মক নারী অকর্মক/নিষ্ক্রিয়।
 ‘মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’ থেকে বোঝা যায় কবি ও বনলতা সেন সম্ভবত খুব ঘনিষ্ট ছিলেন না, না হলে উভয়ে পাশাপশি না বসে মুখোমুখি বসেছিলেন কেন? অর্থ্যাৎ বনলতা সেন কবির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন।
 বনলতা সেন চরিত্রটি (সুন্দরী,অহংকারী,পুরুষবিদ্বেষী যিনি পুরুষকে দুদন্ড শান্তি দিয়েই ছুড়ে ফেলে দেন এবং স্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক) যা সুন্দরী নারীদের বহুগামীতার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয়।
 জীবনানন্দ চরিত্রটি (ভীতু,হতাশাগ্রস্থ,অতিমাত্রায় নারীপ্রেমিক যিনি নারীকেই শান্তি-স্বরূপা বলে মনে করেন,ঈশ্বর কিংবা প্রকৃতি তাকে কোন শান্তি দিতে পারে না) যিনি নারীর নিকট কাতর আবেদন-নিবেদনে অভ্যস্ত এবং নারীকে স্থায়ীভাবে অধিকার করতে জানেন না।
 বনলতা সেন কবিতায় ধূসর জগত,অন্ধকার বিদিশার নিশা,থাকে শুধু অন্ধকার– এসব বর্ণনা থেকে বলা যায় এটি একটি বিবর্ণ বর্ণের কবিতা।
 তাই সবশেষে বলা যায় হাজার বছর ধরে অনোন্যপায় পুরুষ যে নারীর আকাংখা করে এসেছে তাকে না পেয়ে কল্পনায় কিছু সুখ খুজে নিয়ে বাচতে চেয়েছে। একজন কবি হযত হাজার বছর নারীর সন্ধান করে ক্লান্ত হয়ে বনলতা সেন এর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন কিন্তু একজন প্রকৃত নারীর সন্ধান লাভের জন্য পুরুষ জাতিকে হয়তো অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বনলতা সেনই সর্বশেষ ও চূড়ান্ত কাম্য নারী হতে পারে না।।

Related Post:

  • live tv শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের পোস্ট শুরু করছি। দেশ জুড়ে শুরু হচ্ছে থ্রিজি নিয়ে মাতামাতি। তাই এখন  পিসি হেকেই আমরা খুব সহজে ইন্টারনেট টিভি এর স্বাদ নিতে পারব।  এজন্য আমার আজকের পোস্ট কয়েকটি অনলাইন টিভি চ্যানেল এর উপর। Sports Channels 01.Ten Cricket 04.PTV Sports 05.ESPN Live 06.DD Sports 07.Star Sports 08.Ten Sports 09.Ten Action 10.Sony Six 11.NBA Tv 12.Geo S… Read More
  • এখন থেকে আপনি নিজেই করুন মোবাইল সার্ভিসিংমোবাইল সার্ভিসিং শিখতে চান তাহলে এই লেখাটি ভালো পড়ে নিন হয়ে যান নিজেই মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার প্রথমেই পরিচিত হয়ে নিই মোবাইল সার্ভিসিং এর জন্য যে সব টুলসগুলো প্রয়োজন সেগুলোর সাথে। ১, screwdriver বিভিন্ন সেটের জন্য বিভিন্ন  স্ক্রু ড্রাইভার থাকে। আপনারটি দেখে কিনুন। ২।  চিমটা । এটা মোবাইল সার্ভিসিং এর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। ৩। Work Station আমরা বলি হটগান বা তাতাল… Read More
  • চকলেটের কি-বোর্ড, মানুষের তৈরি হাতি এবং আউডির তৈরি বাই-ছাইকেল এবং বিদ্যুৎ বিহীন ছকেট! আজকের আমার এই পোস্টটি সম্পুর্নই ভিন্ন একটি বিষয়ের উপর, কিছু বিস্ময়কর ছবির পরিচয় খুঁজতে গিয়েই তথ্যগুলো জানলাম ভাল লাগল তাই সকলেরই সাথে শেয়ারও করলাম আশা করি সবার ভাল লাগবে। প্রথমেই আলচনা করব বেরিয়ার রিফ ন্যাশনাল পার্ক নিয়ে এবং এর পরে আলোচনা করব সম্পুর্ন চকলেটের তৈরি একটি কি-বোর্ড সম্পর্কে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়তে আলোচনা করব একটি বাই-ছাইকেল সম্পর্কে, যা ঘন্টায় ৮০ কিলমিট… Read More
  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment